রূপচর্চা বিষয়ক টিপস


 
সুন্দর সতেজ ত্বক তো সবাই চায়।কিন্তু সারাদিনের ব্যস্ততার ফাকে ত্বকের যত্নের জন্য খুব বেশি সময় বের করে নেয়া হয় না। তাই ঝটপট ত্বকের যত্নের জন্য সহজ উপায়গুলোই খুঁজে নেন রূপ সচেতনরা।দোকান থেকে কিনা বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রসাধনী রাসায়নিক দ্রব্য থেকে প্রস্তুত করা হয়,যা অনেক সময় ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। আর তাই সহজেই ত্বকের যত্নের জন্য খুব সহজলভ্য একটি উপাদান হলো বরফ। ত্বককে সতেজ রাখতে বরফের ব্যবহার অতুলনীয়।

বহু বছর আগে থেকেই ত্বকের যত্নে শীতল পানি কিংবা বরফের ব্যবহার হতো। যুগে যুগে এই প্রথাটি রূপ সচেতন নারীদের কাছে আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।ত্বককে নিমিষেই সতেজ করে তুলতে, দাগ কমাতে, বয়সের ছাপ এড়াতে এবং ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে বরফের জুড়ি নেই।জেনে নিন, ত্বকের যত্নে বরফের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু তথ্য।

এই পোস্টটি পোড়ে আমরা যা যা জানতে পারব:
 মসৃণ ত্বক

নিয়মিত ত্বকে বরফ ব্যবহার করলে ত্বকের পোরগুলো ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসে। ফলে ত্বককে অনেক বেশি মসৃণ দেখায়।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি
নিয়মিত ত্বকে ক্লকওয়াইজ বরফ ঘষে ব্যবহার করলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে দীপ্তিময় ও উজ্জ্বল।
 
ফোলা ভাব কমানো

ঘুম থেকে ওঠার পর কিংবা কম ঘুম হলে অনেক সময় ত্বক কিছুটা ফুলে থাকে। অনেক সময় ক্লান্তির কারণে চোখের নিচেও ফোলা ভাব থাকে। এই সমস্যার সমাধান হলো বরফ ম্যাসাজ। ত্বক ফুলে থাকলে বেশ কিছুক্ষণ বরফ ম্যাসাজ করুণ। ফোলা ভাবটা অনেকটাই চলে যাবে। ত্বকের দাগ ও রিঙ্কেল দূর করার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে বরফ ব্যবহার করতে হবে। জেনে নিন পদ্ধতিটি।
  
– প্রথমে পুরো মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন।
– একটি অথবা দুটি বরফের কিউব নরম কাপড়ে পেঁচিয়ে নিন।
– ত্বকের বিভিন্ন স্থানে এবং দাগযুক্ত স্থানগুলোতে বরফটা কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন
– এবার বরফটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করে নিন।
– নরম টাওয়েল দিয়ে মুছে নিন।
– এক রাত পর পর এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।
– শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে টোনার লাগিয়ে নিতে হবে।

আইস ফেসিয়ালের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

মূলত, মুখের যত্নের জন্য বরফের টুকরো ব্যবহার সঠিকভাবে এবং ত্বকের অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। সংবেদনশীল ত্বক, সম্প্রতি মুখের চিকিৎসা করানো, অথবা মুখের ত্বকের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত কৈশিক রোগ আছে এমন ব্যক্তিদের দ্বারা সঠিকভাবে প্রয়োগ না করা হলে বা ব্যবহার না করা হলে, ফেসিয়াল আইসিং বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।যার মধ্যে রয়েছে:
 
ত্বকে জ্বালাপোড়া বা লালচে ভাব, বরফ সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করলে চামড়ার উপরের স্তরে ঠান্ডা পোড়া (frostbite) হওয়ার ঝুঁকি থাকে।দীর্ঘক্ষণ বরফ ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক তেল হারিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ফলস্বরূপ ত্বক খসখসে হয়ে চামড়া উঠার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।রক্তনালীর সংকোচন, বরফ ত্বকে প্রয়োগ করলে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়, যা কখনও কখনও রক্তপ্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের সংবেদনশীল বা ভঙ্গুর কৈশিক আছে। ঠান্ডার কারণে অনেকে হঠাৎ ব্যথা, অসস্তি বা অসাড়তা অনুভব করতে পারেন।কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঠান্ডা সংবেদনশীলতা (cold urticaria) থাকতে পারে, যা বরফ প্রয়োগ করলে অ্যালার্জির মতো ফুসকুড়ি, ফোলা বা চুলকানি তৈরি করতে পারে।

মুখে বরফ কিভাবে ম্যাসেজ করবেন

আইস ফেসিয়ালের নরম জন্য সুতির কাপড়ে মোড়ান বরফের টুকরো ব্যবহার করে এক বা দুই মিনিট ধরে বৃত্তাকার গতিতে আপনার মুখ আলতো করে ম্যাসাজ করতে থাকবেন।
হ্যাঁ, আপনি এই বৃত্তাকার ম্যাসাজ প্রতিদিন কয়েকবার নিজে নিজেই করতে পারেন। এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে, পেশির শিথিলতা আনতে এবং ত্বককে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। নিচে প্রতিটি অংশে ম্যাসাজ করার কয়েকটি পরামর্শ:

১. চোয়াল (Jawline) – আঙুলের প্যাড ব্যবহার করে হালকা চাপ দিয়ে কানের দিকে উপরের দিকে ম্যাসাজ করুন।

২. থুতনি (Chin) – কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে বৃত্তাকার গতিতে ম্যাসাজ করুন।

৩. ঠোঁট (Lips) – ঠোঁটের চারপাশে হালকা বৃত্তে ম্যাসাজ করুন।

৪. নাক (Nose)– নাকের পাশ থেকে গালের দিকে ছোট ছোট বৃত্তে ম্যাসাজ করতে পারেন।

৫. গাল (Cheeks)– হালকা চাপ দিয়ে কানের দিকে উপরের দিকে ম্যাসাজ করুন।

৬. কপাল (Forehead)– ভ্রুর মাঝখান থেকে উপরের দিকে এবং বাইরে বৃত্তে ম্যাসাজ করুন।
ম্যাসাজের সময় খেয়াল রাখবেন ত্বক যেন পরিষ্কার থাকে।

বরফ ম্যাসেজের সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেনঃ

১.ম্যাসাজ অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
খুব বেশি জোরে ঘষবেন না।
২.ত্বকে বরফ সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। তাই যখনই ব্যবহার করবেন নরম কাপড় পেঁচিয়ে ব্যবহার করবেন।
৩.এক স্থানে খুব বেশীক্ষণ বরফ ধরে রাখবেন না। যতক্ষণ সহনীয় মনে হবে ততক্ষণ রাখলেই হবে।
বরফটা জমানোর সময় চাইলে পানিতে গোলাপজল, অ্যালোভেরার রস, পুদিনার রস, টমেটোর রস, লেবুর রস কিংবা সসার রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক আরো দ্রুত সুন্দর ও দাগমুক্ত হবে।

আইস ফেসিয়াল কেন এতো জনপ্রিয়?

ফেসিয়াল স্কিন আইসিং (Facial Skin Icing) বা মুখে বরফ প্রয়োগ করার জনপ্রিয়তা ব্যাখ্যা করা সহজ, কারণ এটি একাধিক স্বাস্থ্যকর এবং সৌন্দর্যগত উপকারের সঙ্গে জড়িত। এই প্রবণতা স্বাস্থ্যসচেতন ফ্যাশন বা বিউটি রুটিনের সাথে ভালোভাবেই খাপ খায়, যার মধ্যে রয়েছে: 

১.খরচ কম, অধিকাংশের নাগালের মধ্যে।
২.জটিল নয়, সাধারণ মানুষও সহজেই ঘরে তৈরি করতে পারে।
৩.লোকমুখে এর অনেক গল্প বা অভিজ্ঞতা প্রচলিত আছে, যারা এটি করে উপকার পেয়েছে বলে দাবি করে।
৪.ইন্টারনেটে এটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত।
৫.এটি প্রাকৃতিক, অ-রাসায়নিক।

উপসংহারঃ পরিশেষে রাইটার এর এই মন্তব্য যে, ত্বককে সতেজ রাখতে বরফের ব্যবহার সম্পর্কে সকল প্রকার উপকারি এবং অপকারি দিক নির্ভুলভাবে এই পোস্টে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। যদি কোন তথ্য ভুল মনে হয়ে থাকে বা কোন কিছু বিস্তারিত জানার থাকে ,অবশ্যই আপনার মতামত জানাতে ভুলবেননা। আপনারা এই সম্বন্ধীয় আরো কিছু বিউটি টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url